বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:১৫ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
Welcome To Our Website...
শিরোনাম :
বিদ্যুতের কর্মচারীর বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগ; বেরিয়ে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য মাগুরায় আদালতের আদেশ অমান্য করে স্থাপনা ভেঙে দেওয়াল নির্মাণের অভিযোগ শ্রীপুরে এতিমখানা জামে মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন শ্রীপুরে আদালতের আদেশ অমান্য করে ঘর নির্মাণের অভিযোগ শ্রীপুরে দলীয় ব্যানারে সরকারি খাল দখল চট্টগ্রামে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা মাগুরায় ন্যাশনাল পিপলস পার্টি’র আহ্বায়ক কমিটি গঠন লক্ষ্মীপুরে বিলুপ্তির পথে ‘ভেসাল জাল’ সাংবাদিক ফরিদ ও সাংবাদিক মনজুর মা আর নেই, সর্বস্তরে শোকের ছায়া বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাংচুরকারীদের রেহাই নেই: কাউন্সিলর জসিমের হুঁশিয়ারি

কদম না এলে চট্টগ্রাম মেডিকেলে জমে লাশের স্তূপ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ৫৭১ বার পঠিত

ছুরির আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হামিদ রুবেল নামের এক যুবক। শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতেই তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় মেডিকেলের মর্গে। অথচ সেই লাশের ময়নাতদন্ত হতে হতে লেগে গেছে পরদিন রোববার বিকেল পর্যন্ত।

এই এক রুবেলের লাশই নয় শুধু, রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেলের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পড়ে ছিল ৯টি।

জানা গেছে, এই লাশ ময়নাতদন্ত না হওয়ার পেছনের কারণ মূলত ডোমের সংকট। সেখানে কর্মরত একমাত্র ডোম কদম আলী কাজে হাজির না হলেই লাশের স্তূপ জমে থাকে সেখানে। ডোম কদমও আবার কাজ করেন মূলত খণ্ডকালীন। আরও দুজন নিয়মিত কর্মী থাকলেও তারা কাজ করেন ফরেনসিকে। কিন্তু কাটাছেঁড়ার সব কাজই করেন কদমই।

গত রোববারও ডোম কদম নেই শুনেই মেডিকেল মর্গের বাইরে তৈরি হয় লাশের স্বজনদের হট্টগোল। পরে ডোম কাজে যোগ দেওয়ার পর বিকেলের মধ্যেই নয়টি লাশের সবগুলোই ময়নাতদন্ত করে ডেলিভারি দেওয়া হয় বলে জানান ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সুমন মৎসুদ্দী।

অন্যদিকে ডোম হিসেবে খণ্ডকালীন কাজ করা কদম আলী মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি একযুগেরও বেশি সময় ধরে মর্গে কাজ করছি। এই কাজের জন্য আমাকে দেওয়া হয় তিন হাজার টাকা। এত কম টাকায় চলতে পারি না বলে লাশের স্বজনদের কাছ থেকে বকশিস খুঁজি। এটাও অপরাধ হয়ে যায় আমার। তাই এ কাজ করব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে দুজন ডোম, একজন টেকনিশিয়ান, একজন দারোয়ান, দুজন সুইপার কর্মরত থাকার কথা। কিন্তু কাজ করছেন খণ্ডকালীন ডোম কদম আলী এবং দৈনিক মজুরিভিত্তিক আরেকজন। অন্যদিকে নিয়মিত স্টাফরা সব কাজই কদমের ওপর চাপিয়ে দিয়ে অন্য কাজে চলে যান বলে জানা গেছে।

২০০১ সাল থেকে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ডোম নেপালের সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন কদম আলী। নেপালের মৃত্যুর পর তাকে চমেক হাসপাতালের মর্গে প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকা সম্মানী দিয়ে রাখা হয়।

তবে দেড়যুগের বেশি সময় আগে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল থেকে পৃথক হয়ে নতুন ভবনে স্থানান্তরের পরও সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব, লোকবল সংকটসহ নানা কারণে জোড়াতালি দিয়েই চলছে এটি।

সূত্র জানায়, নগরীর আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল থেকে জেলার একমাত্র মর্গটি ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ফরেনসিক বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক মেডিসিন মর্গ নির্মিত হলেও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও লোকবলের অভাব রয়েই গেছে শুরু থেকে। এখানে লাশের ময়নাতদন্তের কাজ চলছে পুরনো ও মান্ধাতার আমলের যন্ত্রপাতি দিয়েই। উন্নত বিশ্বে মর্গের কাজে ব্যবহৃত হয় ফোকাসির অপারেশন লাইট, পোর্টেবল এক্সরে মেশিন, গরম ও ঠান্ডা পানির সরবরাহ, ইলেকট্রিক করাত, স্টেইনলেইস অটোপসি ছুরি, সেসুরেটেড কমন সল্ট সলিউশনসহ আধুনিক সব যন্ত্রপাতি।

কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখা গেছে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের অটোপসি রুমে এসবের কিছুই নেই। অটোপসি কক্ষ ঘুরে দেখা গেছে, নোংরা ও জীবানুযুক্ত ব্লেড এবং জং ধরা করাত দিয়ে লাশ কাটা ছেঁড়ার কাজ করা হয়। অটোপসি রুমটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলেও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে চারপাশ ঘিরে উৎকট গন্ধ লেগেই থাকে সবসময়।

অজ্ঞাত ও ব্যাধিজনিত মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করার জন্য শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিভিন্ন টিস্যু নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ওই ভবনে হিস্টোপ্যাথলজি, রেডিওলজি বা এক্সরে কক্ষ থাকলেও ওই কক্ষ বেশিরভাগ সময়ই তালাবদ্ধ থাকে। ভিকটিমের কিডনি, লিভার, পাকস্থলি ভিসেরা হিসেবে প্লাস্টিকের বোতলে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।

ফরেনসিক নিয়ম অনুযায়ী একজন ডোমের কেবল লাশের মাথা কাটার নিয়ম থাকলেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল মর্গে নিয়োজিত ডোম কদম আলী লাশ কাটাছেঁড়া থেকে শুরু করে এমনকি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও তৈরি করেন।

ডোম কদম আলী অকপটে সেটাও স্বীকার করে জানান, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে তিনি লাশের আত্মীয়স্বজন থেকে লাশপ্রতি ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন।

তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সুমন মৎসুদ্দী বলেন, ‘আমরা সরকারি চাকরি করি। সীমাবদ্ধতার কথা আমরা সহজভাবে বলতে পারি না এটাই সমস্যা।’

সূত্র: চট্টগ্রাম প্রতিদিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Developed By Deshjog TV