পরিবারের আর্থিক অনটনের কথা বলে ভুয়া পরিচয়ে প্রথমে চাকরি নেয় দোকানে । কিছুদিন চাকরি করে দোকানের সবকিছু লুটে নিয়ে নি:স্ব করে দেয় দোকান মালিককে। এরপর চুরি করা মালামাল বিক্রি করে দেয়া হয় নির্দিষ্ট একটি দোকানে। একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে চট্টগ্রামে ভয়াবহ এই চক্রের সন্ধান পেয়েছে চকবাজার থানা পুলিশ। চক্রের দুই সদস্য জাকির ও সাইফুল এখন পুলিশের জালে।
গত নভেম্বরের ২০ তারিখ চকবাজারের জয়নগর এলাকার ক্যাফে সুলতান নামে খাবার হোটেলে হাজির হয় এক যুবক। নিজেকে অসহায় সাজিয়ে ভুয়া পরিচয়ে কথা বলেন হোটেল মালিক রবিউল ও রিপনের সাথে। এরপর দোকানে নাস্তার কারিগর হিসেবে দৈনিক ৬শ টাকা বেতনে চাকরি নেয় সে। এর ৬ দিন পর ২৬ নভেম্বর রাতে দোকান বন্ধ করে প্রতিদিনের মতো দোকানের ভেতরেই ঘুমিয়ে পড়ে মালিক রিপনসহ কর্মচারীরা। সকালে রবিউল দোকানে আসার পর দেখতে পান বাহির থেকে তালা মারা। এরপর কর্মচারীদের ঘুম থেকে তোলার পর তিনি নিশ্চিত হন ওই কারিগর সেখানে নেই। তারপর বিকল্প চাবির ব্যবস্থা করে দোকান খোলার পর বুঝতে পারেন সবকিছু লুটে নিয়ে গেছে সে।
নগদ প্রায় ৩৮ হাজার টাকা, মোবাইল, এটিএম কার্ডসহ দোকানের বিভিন্ন মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায় সে। তাকে যেন সনাক্ত করা না যায় সেজন্য দোকানের সিসিটিভি মনিটর ও হার্ডডিক্স নিয়ে যায় ওই চোর। এরপর থেকে তার ব্যবহৃত ফোন নাম্বারও বন্ধ করে দেয় সে। কোন উপায় না পেয়ে রবিউল হাজির হোন চকবাজার থানায়।
ওসি মনজুর কাদেরের নির্দেশে অপরাধীকে ধরতে মাঠে নামে টিম চকবাজার। তার দিকনির্দেশনায় এস আই আরাফাত হোসেনের নেতৃত্বে এসআই শফিউল ও এ এস আই মাইনুদ্দিন শুরু করে গভীর অনুসন্ধান। তাকে সনাক্তে কোন ধরণের ক্লু না থাকলেও দোকানে চাকরি করা কালীন সময়ে বিকাশ দোকান থেকে স্ত্রীর বিকাশ নাম্বারে ৫০০ টাকা পাঠিয়েছিল সে। আর সেই সূত্র ধরেই তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় চোরের কাছে পৌঁছে যায় পুলিশ।
এরপর বৃহষ্পতিবার রাতে নগরীর পতেঙ্গা এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে চোর জাকির হোসেনকে আটক করে পুলিশ। তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জে। আটকের পর চুরির বিষয়ে সবকিছু স্বীকার করে নেয় জাকির।
তার দেয়া তথ্য মতে, স্টীল মিল এলাকায় সাইফুলের দোকান থেকে চুরি যাওয়া মোবাইল ও মালামাল উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় চুরির মালামাল কেনার দায়ে জাকিরের সহযোগী হিসেবে সাইফুল ইসলামকেও আটক করা হয়।
অভিযানে নেতৃত্বদানকারী চৌকস পুলিশ অফিসার এসআই আরাফাত হোসেন বলেন, জাকির হোসেন দোকানে ভুয়া পরিচয়ে চাকরি নিয়ে মালিকের চোখ ফাঁকি দিয়ে টাকা ও মূল্যবান জিনিস চুরি করে পালিয়ে যায়। এরপর সেগুলো সাইফুলের দোকানে গিয়ে বিক্রি করে।এ চক্রের সাথে আর কেউ জড়িত আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অপরিচিত কাউকে চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রে তার নাম ও পরিচয় যাচাই বাছাই করা অত্যন্ত জরুরী। আর চোরাই পণ্য কেনার দায়ে বড় ধরণের বিপদ ঘটতে পারে, তাই কোন মালামাল কেনার ক্ষেত্রে সেটির কাগজপত্র যাচাই করে কেনার পরামর্শ দিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এর আগে সম্প্রতি রিকশা চালকের ছদ্মবেশে একটি প্রতিষ্ঠানের পঁয়তাল্লিশ লাখ টাকার মালামাল কৌশলে আত্মসাতের ঘটনায় ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তকে মালামালসহ গ্রেপ্তার করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন এস আই আরাফাত হোসেন।চকবাজার থানা এলাকায় মাদক উদ্ধারসহ অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে তিনি ইতিমধ্যে সিএমপিতে চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন।