বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১১:০৬ অপরাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
Welcome To Our Website...

কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সম্পাদককে টেনেহিঁচড়ে বের করে পেটালেন কর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২২
  • ২৯৫ বার পঠিত

কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ ওরফে চ্যালেঞ্জকে টেনেহিঁচড়ে বের করে ব্যাপক মারধর করেছেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এতে তিনি গুরুতর জখম হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে শহরের পিটিআই সড়কের একটি বাসায় এ ঘটনা ঘটে।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে হাফিজকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয় পুলিশ। চিকিৎসকেরা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু জরুরি বিভাগে আধা ঘণ্টা থাকার পর হাফিজ তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বাইরে চলে যান। হাফিজের অভিযোগ, ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁকে লাঠিসোঁটা দিয়ে পিটিয়েছে। তিনি ঘটনার বিচার চান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ইকবাল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর কপালের কয়েক জায়গায় কেটে গেছে। মাথায়ও আঘাত পেয়েছেন। শরীরে অসংখ্য জায়গায় মারধরের চিহ্ন আছে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর শেখ হাফিজ সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন। হাফিজের ভাষ্য, দুপুরে তিনি শহরের পিটিআই সড়কে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়ির সামনে তাঁর খালার ভাড়া বাসায় যান। চারতলা ভবনের তিনতলার একটি ফ্ল্যাটে তাঁর খালা ভাড়া থাকেন। কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগের ৩০-৩৫ জন নেতা-কর্মী ওই বাসার নিচে জড়ো হন। তাঁরা নিচ থেকে তাঁকে চিৎকার করে ডাকতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা কলাপসিবল গেট ভেঙে ওপরে আসতে উদ্যত হন। তখন তিনি ওই ফ্ল্যাটের শৌচাগারের ছাদে আশ্রয় নেন। পরে তাঁরা ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাঁকে খুঁজতে থাকেন। এরপর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে বের করে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পেটাতে পেটাতে নিয়ে যান।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান কুষ্টিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর সেলিম। তিনি হাফিজকে সেখান থেকে পিটিআই সড়কে মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়ির সামনে নিয়ে যান। তখনো হাফিজকে মারধর করছিলেন কর্মীরা। এর মধ্যে হাফিজের গায়ে থাকা পোশাক ছিঁড়ে ফেলা হয় এবং সারা শরীর রক্তাক্ত জখম হয়। একপর্যায়ে এসআই জাহাঙ্গীর হাফিজকে ছেড়ে পাশে গিয়ে দাঁড়ান এবং মুঠোফোনে কথা বলতে থাকেন। পরে থানা-পুলিশের একটি গাড়ি এসে হাফিজকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। গাড়িতে তোলার পরও তাঁকে মারধর করছিলেন ছাত্রলীগের কর্মীরা।

হাসপাতালে নেওয়ার সময় পুলিশের গাড়িতে থাকা অবস্থায় ফেসবুক লাইভে যান হাফিজ। তিনি বলতে থাকেন, ‘আমাকে হত্যার জন্য রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। আমার প্রিয় নেতা মাহবুব উল আলম হানিফের কাছে বিচার চাই। আমি ছাত্রলীগ করি। আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা। বিচার না পেলে আমি আত্মহত্যা করব।’

হাসপাতালে গিয়ে হাফিজ অভিযোগ করেন, কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এক নেতার ইন্ধনে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁকে বেইজ্জত করে মারধর করেছে। তাঁকে হত্যার জন্য এভাবে মারা হয়েছে। কুষ্টিয়া পৌর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক হাসিব কোরাইশী, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শেখ সজীবের নেতৃত্বে তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে হাসিব কোরাইশী বলেন, ‘তাঁকে (হাফিজ) সাধারণ সম্পাদক বলা যায় না। সে সন্ত্রাসী। সে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। তাঁকে এলাকার লোকজন মারধর করেছে।’ শেখ সজীব বলেন, ওই বাসায় তাঁকে আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া গেছে। এলাকাবাসীর খবর পেয়ে তাঁরা সেখানে যান। স্থানীয় লোকজন তাঁকে মারধর করেছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসগর আলী বলেন, ‘অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। যদি কোনো ভুলত্রুটি হয়ে থাকে, সেটা বসে সমাধান করা যেত। ওপেন রাস্তায় তাঁকে মারধর করা মেনে নেওয়া যায় না। এরা দলের মধ্যে ঢুকে ছাত্র সংগঠনকে নষ্ট করে দিচ্ছে। নেতার (হানিফ) বাড়ির সামনে এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

বিকেল চারটার দিকে পিটিআই সড়কের ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা গেছে, ঘরের ভেতরে ভাঙচুর করা। বাসায় থাকা শিরীন আক্তার নামের এক নারী বলেন, ‘হাফিজ আমার ফুপাতো বোনের ছেলে। আমার বাসায় দুপুরে খেতে আসছিল। আমি বাইরে ছিলাম। বাসায় আমার বড় মেয়ে ছিল।’

শিরীনের বড় মেয়ে শবনম মমতাজ বলেন, ‘ভাইয়ার সঙ্গে পারিবারিকভাবে আমার বাগদান হয়ে আছে। সেটা দুই বছর আগে। ছাত্রলীগের কমিটির কারণে বিয়ে হচ্ছে না। কমিটি ভেঙে গেলে বিয়ে করবেন। দুপুরে বাসায় খেতে এসেছিলেন। ছাত্রলীগের বেশ কিছু ছেলে এসে দরজা ভেঙে ভাইয়াকে টেনেহিঁচড়ে মারধর করতে করতে নিয়ে যায়।’

প্রতিবেশী নার্গিস খাতুন বলেন, হাফিজ দুই বছর ধরে ওই বাসায় আসা-যাওয়া করেন। তাঁদের জানানো হয়েছে তিনি বড় মেয়ের স্বামী। আজ দুপুরে বেশ কয়েকজন ছেলে লাঠি নিয়ে তাঁকে মারতে মারতে নিয়ে যায়। তাঁরা ভয়ে বের হননি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Developed By Deshjog TV