শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:১০ অপরাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি :
Welcome To Our Website...

ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দেবেন ৫৫ বছরের সাংবাদিক

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২০ মে, ২০২২
  • ৫১২ বার পঠিত

শিক্ষার জন্য বয়স যে কোনো বাধা নয়, সেটা আরেকবার প্রমাণ করলেন বেলায়েত শেখ। ৫৫ বছর বয়সী এ ব্যক্তি অংশ নিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায়।

ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার জন্য বেলায়েত ফরম পূরণ করেছেন। আগামী ১১ জুন এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা হবে।

বেলায়েতের বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুরে। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে আছে। বিবাহিত বড় ছেলে ব্যবসা করছেন। ছোট ছেলে শ্রীপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন।

বেলায়েতের বড় ছেলের স্ত্রীও একটা কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। গাজীপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ার সময় ২০১৭ সালে একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেন বেলায়েত।

নতুন করে শুরু

বেলায়েত শেখের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে তিনি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। সে সময় বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। পরে তিনি আর শিক্ষাজীবন সচল রাখতে পারেননি।

বেলায়েত বলেন, ‘আমি নিজে যেহেতু পড়তে পারিনি, তাই ভাইদের লেখাপড়া করিয়ে উচ্চশিক্ষিত করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেটাও পারিনি। এরপর নিজের সন্তানদের পড়াতে চেয়েছিলাম। তারাও অর্ধেক করে আর আগ্রহ দেখায়নি।

‘পরে তাদের প্রতি রাগ করে ৫০ বছর বয়সে ২০১৭ সালে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া শুরু করি। সে সময় আমার ছোট ছেলে ক্লাস এইটে পড়াশোনা করছে।’

২০১৯ সালে বেলায়েত ঢাকার বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাস করেন। আর ২০২১ সালে তিনি রাজধানীর রামপুরার মহানগর কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

এসএসসিতে বেলায়েত হোসেনের জিপিএ ৪.৪৩। আর এইসএসসিতে তার জিপিএ ছিল ৪.৫৮।

বেলায়েত বলেন, ‘এইচএসসিতে সাত মাস পড়ে পরীক্ষা দিয়েছি। অনেক সময় রাত জেগেও পড়ালেখা করেছি।’

বর্তমানে বেলায়েত শ্রীপুরের মাওনার সাইফুর’স শাখায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং করছেন।

পরিবার চলছে কীভাবে

বর্তমানে পরিবারের ব্যয়ভার কীভাবে বহন করছেন জানতে চাইলে বেলায়েত বলেন, ‘এক মাস ধরে আমার বড় ছেলেই সংসার চালাচ্ছে। সে স্যানিটারির ব্যবসা করে।

‘আর আমি দৈনিক করতোয়া পত্রিকায় শ্রীপুর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে কিছু নিউজ করলে মানুষজন কিছু টাকা-পয়সা দেয়।’

কেমন ছিল ক্লাসে ফেরার অভিজ্ঞতা

২০১৭ সালের যে সময় থেকে বেলায়েত শেখ পড়াশোনা শুরু করেন, তখন থেকে এই পর্যন্ত অভিজ্ঞতা কেমন জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুরুর দিকে এটা আমার জন্য একটু কঠিনই ছিল। কারণ সে সময় আমার কাছের মানুষজনও আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করত, তবে একটা সময় গিয়ে সেটা ঠিক হয়ে যায়। এখন আমার বউ আমি কোন সময় ক্লাসে যাব, সেটা স্মরণ করিয়ে দেয়।’

সহপাঠীদের আচরণ কেমন ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যাদের সঙ্গে ক্লাস করেছি, তাদের কাছ থেকে খারাপ কোনো অভিজ্ঞতার শিকার হইনি। আমার সঙ্গে যেসব মেয়ে ক্লাস করে, তারা আমাকে ‘আঙ্কেল’ ডাকে। আর আমি তাদের ‘আম্মু’ ডাকি।

“এক ছেলে আমাকে ‘বুড়া’ ডেকেছিল। পরে তাকে আমি ঝাড়ি দিয়ে বলেছি, ‘এই ছেলে আমি কি বুড়া হইছি? আমাকে ‘দাদা ভাই’ না হয় ‘বড় ভাই’ বা ‘আঙ্কেল’ ডাকবি।’ এটা নিয়ে তারা হাসাহাসি করে বেশি।”

বেলায়েত বলেন, ‘আমার নিজেকে বয়স্ক লাগে না; ইয়ংয়ের মতোই লাগে। কিছু চুল পেঁকে গেছে। এগুলো কালি দিয়ে রাখি। কারণ কালি দিয়ে না রাখলে এগুলোর জন্য নিজেকে বয়স্ক মনে হয়। আর তখন মনটা দুর্বল হয়ে যায়।’

সংসার পরিচালনা এবং কাজ করেও যে লেখাপড়া করা যায়, সেটা বর্তমান প্রজন্মকে দেখাতে চান বেলায়েত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেতে সবার কাছে দোয়াও চেয়েছেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Developed By Deshjog TV