চাঁপাইনবাবগঞ্জে থাকা প্রথম স্ত্রী-সন্তানের কথা স্বীকার করেছেন সোহেল মিয়া ওরফে মোখলেসুর রহমান। সম্প্রতি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে প্রতিবন্ধী রওশন দম্পতিকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয়। ভাইরাল সেই সংবাদটি দেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক নারী সোহেল মিয়াকে তার নিখোঁজ স্বামী বলে দাবি করেন। ওই নারীর নাম শুরাতন বেগম। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের সন্তোষপুর গ্রামে।
তিনি দাবি করে বলেন, সোহেল মিয়া নাম বলা হলেও তার স্বামীর নাম মোখলেসুর রহমান, ডাক নাম বকুল। একই ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের বকুলের সঙ্গে তার বিয়ে হয় ১৯৯২ সালে। এরপর ২০০৪-২০০৫ সালের দিকে ঢাকা যাওয়ার কথা বলে, তার স্বামী আর ফিরেনি। ওই সময় তিনি অনেক খোঁজখবর নিয়েও তার কোনো সন্ধান পাননি।
শুরাতন বেগম জানান, তার তিন ছেলে এক মেয়ে। ছেলে মেয়েদের নিয়েই তিনি এরপর অনেক কষ্টে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এখন আর স্বামীকে ফিরিয়ে নিতে চান না। তবে তিনি আরও জানান, সোহেল মিথ্যা কথা বলছে, এটা সবাই জানুক।
শুরাতন বেগমের বড় ছেলে, সিহাব উদ্দিন জানান, তার বাবাকে ফেসবুক, টিভিতে দেখে চিনতে পেরেছেন। তিনি বলেন এতোদিন জানতাম বাবা নিখোঁজ। কিভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন উনিই আপনার বাবা? এমন প্রশ্নে সিহাব বলেন, নিজের বাবাকে দেখে চিনব না? গ্রামের সবাই চিনতে পেরেছে।
সিহাব উদ্দিন আরও বলেন, তার বাবা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন, কিন্তু বলছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে। এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখলে সত্য বেরিয়ে আসবে। তার আসল নাম মোখলেসুর রহমান বকুল। কিভাবে সোহেল মিয়া হলেন, আইডি কার্ড কিভাবে করল এ বিষয়গুলো দেখতে বলেন তিনি।
সিহাব বলেন, তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়, ছোট ভাই সোহাগকে নিয়ে একটি চায়ের দোকান চালান তিনি। সেই আয় দিয়ে মাকে নিয়ে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। সবার ছোট নিরব অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। একমাত্র বোনের বিয়ে দিয়েছেন।
বাবা নিখোঁজ হওয়ার পর, খোঁজ করেছিলেন কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ঢাকায় খুঁজে বের করার মত সামর্থ্য হয়নি তাদের।
এখন কি চান? এমন প্রশ্নের জবাবে সিহাব বলেন, ‘আমরা কিছুই চাই না, তবে যে মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে, এটাই দেশবাসীকে জানাতে চাই। তিনি আমার বাবা, ছেলে হলেও বলতে হচ্ছে তিনি মিথ্যা বলছেন, তিনি সেবা করতে সেখানে যাননি, আসলে তিনি লুকিয়ে থাকতেই সেখানে গিয়েছেন।’
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য এনামুল হকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ওই প্রতিবন্ধী নারীকে যে সোহেল বিয়ে করেছে, সেই হচ্ছে মোখলেসুর রহমান বকুল। এতে কোনো সন্দেহ নেই। ফেসবুকে ঘটনাটি গতকাল রাতে আমি দেখে নিশ্চিত হয়েছি। এখানে তার একটি পরিবার রয়েছে। তার স্ত্রী, তিন ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। এলাকায় ১৪-১৫বছর আগে ধারদেনা ও জমিজমা বিক্রি করে হঠাৎ করে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।’
এ সম্পর্কে সোহেল মিয়া ওরফে মোখলেসুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনা বসতো হোক বা যে কোনো কারণেই আমি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চলে আসছি। আমার প্রথম স্ত্রী-সন্তান আছে এটাও সত্য। তবে বেঁচে থাকার তাগিদ বা ভালোবাসার করণেই হোক তিনি রওশনের সঙ্গে সংসার করছেন। তিনি আগের স্ত্রী-সন্তানদের কাছে ফিরে যেতে চান না। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়েই থাকতে চান তিনি।
তিনি আরও জানান, আমার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানের বিষয়টি এতোদিন গোপন রেখেছিলাম। সেই সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার যে তথ্য দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন। মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার জন্য আমি দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাই। এটা আমার জন্য চরম ভুল হয়েছে।