ভোলার মনপুরা বিচ্ছিন্ন চরনিজাম সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ভাসমান অবস্থায় আসা ‘আল কুবতান’ জাহাজ নয়। প্রথমে এটিকে বিদেশি জাহাজ বলা হলেও এটি আসলে একটি বার্জ। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওই বার্জে অবস্থান নেওয়া চরমানিকা কোস্টগার্ডের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার এনামুল হক ও মনপুরা ইউএনওর দায়িত্বে থাকা চরফ্যাশনের ইউএনও আল নোমান।
বৃহস্পতিবার সকালে ওই বার্জটি সাগরে ভাসতে ভাসতে চরনিজামের পূর্বপাশে চরে আটকে পড়ে। সেই ‘আল কুবতান’ বার্জে কেউ না থাকার কারণে স্থানীয় চরনিজাম ও ঢালচরের বাসিন্দারা ট্রলারে রক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ মালামাল নিয়ে যায়। প্রশাসন বার্জটিকে হেফাজতে নিতে দেরি করার সুযোগে একটি প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে লাখ লাখ টাকার মালমাল লুট করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এদিকে স্থানীয়দের পাশাপাশি বার্জ থেকে মালামাল নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন চরমানিকা কোস্টগার্ড।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত প্রশাসনের কোনো পর্যায়ের কেউ বার্জটিকে হেফাজতে নিতে না পারলেও বেলা ১১টার দিকে সেই বার্জের কাছে পৌঁছে এর দায়িত্ব চরমানিকা কোস্টগার্ডের সদস্যরা নিয়েছেন বলে জানান কন্টিনজেন্ট কমান্ডার এনামুল হক।
তিনি জানান, সমুদ্র উত্তাল থাকায় জাহাজের সঙ্গে থাকা বার্জটি শিকল ছিঁড়ে সমুদ্রে ভেসে যায়। পরে এটি চরনিজাম সংলগ্ন সমুদ্র এলাকার চরে আটকে থাকে।
কন্টিনজেন্ট কমান্ডার এনামুল হক আরও জানান, বার্জে কেউ না থাকার কারণে স্থানীয়রা ও জেলেরা ট্রলারে করে বার্জে থাকা গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ, তেলসহ অন্যান্য মালামাল নিয়ে যায়।
অপরদিকে দুর্গম এলাকা ও সমুদ্র উত্তাল থাকায় বার্জের হেফাজত নিতে দেরি হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও আল নোমান। তবে তিনি বৃহস্পতিবার রাতে নেভি, কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশকে অবগত করেছেন বলে দাবি করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে চরনিজামের পূর্বপাশে বঙ্গোপসাগরে ‘আল কুবতান’কে স্থানীয়রা বিদেশি জাহাজ মনে করে ভাসতে দেখে স্থানীয়রা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ও উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেন।
চরমানিকা কোস্টগার্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বার্জটিতে পাথরবোঝাই রয়েছে। বার্জের মধ্যে একটি ভেকু মেশিন, পাথর ভাঙার মেশিন ও পাথর ভাঙার মেশিনে পাথর ওঠানোর একটি মেশিন রয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজনীয় মালামাল রয়েছে। জাহাজটিতে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র জানায়।
ভিডিও ফুটেজ ও কোস্টগার্ড সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে ভেসে আসা ‘আল কুবতান’ বার্জটির সঙ্গে ট্রলার আটকিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল লুট করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সূত্রটি দাবি করছে ইতোমধ্যে ট্রলারে করে নিয়ে গেছে অর্ধকোটি টাকার মালামাল। বার্জ থেকে মালামাল নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন কোস্টগার্ড চরমানিকা।
এ ব্যাপারে উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত বিচ্ছিন্ন চরনিজামের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন জানান, বার্জটিকে স্থানীয়রা বিদেশি জাহাজ ভেবে খবর দেন। পরে বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করি।
এ ব্যাপারে মনপুরা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা চরফ্যাশনের ইউএনও আল নোমান জানান, প্রথমে এটি জাহাজ মনে করলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি একটি বার্জ। এটি অপর একটি জাহাজের সঙ্গে আটকানো ছিল। পরে এটি জাহাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সাগরে ভাসতে থাকে।
ইউএনও আরও জানান, এটি সরকারি সম্পত্তি। শনিবার সকালের মধ্যে বোটে করে বার্জটির মালিকপক্ষ চরনিজামে এসে আল কুবতান বার্জটিকে নিয়ে যাবেন বলে যুগান্তরকে নিশ্চিত করেন তিনি। তবে কোন প্রতিষ্ঠান বা সরকারের কোন দপ্তরের তা তিনি জানেন না। শনিবার তিনি বলতে পারবেন।