সাভার পৌর এলাকায় চোর-ছিনতাইকারী বলে গালির অপবাদ সইতে না পেরে বাসায় এসে আত্মহত্যা করেছে আরাফাত (১০) নামে এক শিশু। তাকে দাফনের জন্য ৫ হাজার টাকা দাবি করে কবরস্থান কর্তৃপক্ষ। খবর বাংলা নিউজের।
এ জন্য নাতির মরদেহ দাফন করতে বিভিন্ন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন দাদি জরিনা বেগম (৬০)।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সকালে আরাফাতকে সাভারের দেওঁগা মুসলিম কবস্থানে দাফনের জন্য কথা বলতে গেলে এই টাকা দাবি করা হয় বলে জানান তিনি।
এরআগে, সোমবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে সাভার পৌর এলাকার দেঁওগায়ে কামালের বাড়ি থেকে শিশুটির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
শিশু আরাফাত চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানার কালিবাজার গ্রামের জিন্নার ছেলে। সে সাভারে দেঁওগায়ে দাদির কাছে থাকতো। বিয়ে বিচ্ছেদের পর বাবা-মা শিশুটিকে দাদির কাছে রেখে যার যার মতো সংসার করছেন। তাদের সঙ্গে এখন আর কোন যোগাযোগ নেই জরিনা বেগমের।
তিনি বলেন, ‘বাপ-মায়ে চলে যাওয়ার পর আরাফাত আমার সঙ্গে সাভারেই থাকতো। শুনেছি কারা যেন আরাফাতকে চোর-ছিনতাইকারী বলে গালিগালাজ করেছে। পরে গতকাল (সোমবার) দুপুরে আমি বাসায় না থাকলে সে ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুঁলে আত্মহত্যা করে। তার মরদেহ পুলিশ এসে উদ্ধার করে। আজ (মঙ্গলবার) তাকে দাফনের জন্য কবস্থানে গিয়েছিলাম কথা বলতে। কিন্তু টাকা চায় ৫ হাজার।
কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি অনেক জায়গায় গেছি, এখনো যাচ্ছি। আমরা গরিব মানুষ, এই পোলাডার (ছেলে) বাবা-মা থাইক্কাও নাই। আমি ভিক্ষা করে আরাফাতের পোসমাডামের (ময়নাতদন্তের), কাপড় ও বাঁশ কেনার টাকা জোগার করেছি। এই টাকা হুট করে এখন কোথায় পাব?’
দেওঁগা মুসলিম কবস্থানের কোষাধ্যক্ষের দ্বায়িত্ব থাকা জাহাঙ্গীর খাঁন বলেন, এটা আমাদের কবরস্থানের নিয়ম। এটা একটি সামাজিক কবরস্থান। এই জায়গায় কাউকে (দাফন) মাটি দিতে গেলে টাকা লাগে। এখানে আমরা সাবাই এটা নিয়ম করে নিয়েছি। এই টাকাটা উন্নয়নের কাজে লাগানো হয়। আমরাদের কবরস্থানের নিয়ম দেওগাঁর বাইরের কাউকে এখানে দাফন করা হবে না। তারপরেও ছেলেটি যেহতু দেওগাঁয় ভাড়া থাকতো, তাই আমি বলে এই কবরস্থানে তাকে দাফনের জন্য রেডি করতে বলেছি।
কবরস্থানটির সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। ছেলেটি আমাদের এলাকায় থাকতো। দাফনের জন্য তার দাদি আমাদের বাসায় এসেও সাহায্য নিয়ে গেছেন। আর দাফনের ব্যপারে আমি এখনো কোনো কিছু শুনিনি। আমাদের কবরস্থানের কিছু নিয়ম আছে। থানা থেকে মরদেহ দিলে আমরা সাবাই বসে একটি সিদ্ধান্ত নেব।
সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হক বলেন, সোমবার জরুরি সেবা (৯৯৯) থেকে ফোন পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করি। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজে পাঠাই। মরদেহ আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে হাসপাতাল থেকে সাভারে এসে পৌঁছাবে। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
এবিষয়ে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাজহারুল ইসলামকে জানানোর জন্য বেশ কয়েকবার ফোন ও ক্ষুদে বার্তা দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।