চব্বিশ বছর বয়সী জোলেখা বেগমের বিয়ে হয় তাঁরই মামাতো ভাই আলমগীরের সাথে। আলমগীর স্থানীয় একটি বাজারে চা দোকান চালায়। এ থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে তাদের সংসার চালাতে খুব কষ্ট হতো। বছর পাঁচেক আগে একই এলাকার জো¯œা বেগমের কাছ থেকে বাঁশ দিয়ে কুটির শিল্পের কাজ শিখে নেয় জোলেখা। বিয়ের পর সে বাঁশ দিয়ে খাচি তৈরি করে এখন জোলেখা ওই এলাকার অনেকের কাছেই সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাদের অর্থনৈতিক চাকাও।
শুধু জোলেখাই নয় এরকম লক্ষ্মীপুরে বাঁশের তৈরী কুটির শিল্পে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছে প্রায় ৫শ’ পরিবার। এসব পরিবারের নারী-পুরুষের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে বাঁশের বিভিন্ন ধরণের ব্যবহৃত পণ্য। বিক্রি হচ্ছে ঢাকা-চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন্ জেলায়। সরকারি সহযোগীতা পেলে এ পেশায় আরো বহু লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ প্রচুর পরিমান অর্থ উপার্জন করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের শহর কসবা গ্রামের প্রায় ৫শ’ পরিবার দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এই পেশায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। সংসারের স্বচ্ছলতার পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপড়ার যোগান চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। বর্তমানে প্লাষ্টিক সামগ্রী প্রচুর পরিমানে বাজারজাত হওয়ার কারনে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হলেও পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্যবাহী এই পুরানো পেশাকে ধরে রেখেছেন তারা।
শহর কসবা গ্রামে ব্যাপকভাবে তৈরী হচ্ছে টুকরি, ছালনি, খাঁচা, কুলা, মাছ ধরার বিভিন্ন ফাঁদ, টেপা, লাই-ওড়াসহ (ধান রাখার বড় পাত্র) বাঁশের তৈরী বিভিন্ন জিনিসপত্র। আকার ও মানভেদে এক একটি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা শুরু করে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। বাঁশ দিয়ে তৈরি এ পণ্যগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনও প্রচুর পরিমানে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানকার বাঁশের তৈরি পণ্যগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হয়।
এপেশার কারিগররা জানান, ছোট মুলি বাঁশ আনতে হয় খাগড়াছড়ি থেকে। সড়ক পথে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় লাভ কম হয়। তাই অল্প মুনাফায় এখন ব্যবসা পরিচালনা করা যায় না। সরকারিভাবে যদি তাদেরকে আরো বেশি ঋণ দেয়া হয় তাহলে তারা এ পেশায় আরো ভালো করতে পারবেন। বাজারে বাঁশের তৈরি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও শুধুমাত্র অর্থ সংকটের কারনে তারা ঠিকমতো মালামাল সরবরাহ করতে পারছেন না।
বিসিক শিল্প নগরী লক্ষ্মীপুরের উপ-ব্যবস্থাপক ইসমাঈল হোসেন জানান, বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িতদের সহজ শর্তে ক্ষুদ্র ঋণ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে এ শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় ৫’শ পরিবারকে আবারো স্বল্প সুদে ক্ষুদ্র ঋন প্রদানের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।